শুক্রবার, ৯ মে, ২০২৫
Menu
Menu

জেলে থেকে মাছ চাষী, রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন গৌরীপুরের যতীন্দ্র

Facebook
Twitter

ওবায়দুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)।।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে রেণু পোনা উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৩ পান ময়মনসিংহের গৌরীপুরের যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানী ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী জাতীয় মৎস্য পদক (ব্রোঞ্জ) তুলে দেন যতীন্দ্র বর্মণের হাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।

নয় সদস্যের অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনা হয়ে উঠেনি তাঁর। সংসারের চাহিদা মেটাতে ও জীবিকার তাগিদে ছোটবেলাতেই বেছে নিতে হয় জেলে পেশা। একটি ঝাঁকি (থাপা) জাল দিয়ে খাল-বিল থেকে মাছ শিকার করে সন্ধ্যায় বাজারে বিক্রি করেছেন। বাড়তি আয়-রোজগারের জন্য পারিশ্রামিকের বিনিময়ে অন্যের মৎস্য খামারে শ্রম বিক্রির সময়ই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখেন যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মন। হাড়ভাঙা খাটুনি ও শ্রমে মাটির ব্যাংকে জমানো পাঁচশ টাকায় ১৯৯৫ সালে মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর ভাড়া নেন যতীন্দ্র। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মাছ চাষের আয়ে ২০০৫ সালে গৌরীপুর-রামগোপালপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাহাদুর গ্রামে গড়ে তোলেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও হ্যাচারী।
যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় হ্যাচারির পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছেন যতীন্দ্র। কয়েকজন কর্মচারী মিলে করেছেন পুকুর ও হ্যাচারির চৌবাচ্চা পরিচর্যার কাজ।একটি পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে এখন ২৫টি পুকুর রয়েছে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের।

যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে রুই, কাতল, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কার্ফু, কালিবাউশ সহ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করা হয়।

স্থানীয়দের খামারিদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০ জন খামারি এই হ্যাচারি থেকে নিয়মিত মাছের পোনা ও রেণু সংগ্রহ করেন। তাই বছর শেষে ভাল লাভের মুখ দেখেন তিনি। করেছেন জমি ও বাড়ি। যতীন্দ্রের বয়স এখন বাষট্টি। মাছ চাষের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যাত্রাশিল্পী হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছেন। মাছ চাষে বেকার যুবকদের উদ্বুব্ধ করতে নিয়মিত লিখেন গান ও নাটিকা। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এগুলো বিভিন্ন সেমিনারে প্রচার করেন।

১৯৭৫ সালে তার গান শোনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জমিদার রুহিনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী তাকে পৌর শহরের বাগানবাড়িতে এক খন্ড জায়গা উপহার দেন। সেই জায়গাতেই বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এখন এই মাছ চাষি।

যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, ছোটবেলায় খাল-বিলে মাছ শিকার করার পাশাপাশি হ্যাচারিতে কাজ করতাম। সেখান থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখা। শুরুটা সহজ ছিলনা, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি। পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার। মাছ চাষ ও গান আমার নেশা। এগুলো নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সর্বশেষ যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদন করতেন। আদর্শ এই মাছ চাষি জাতীয় মৎস্য পদক সম্মানা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি আরো ভালো কিছু করে সুনাম বয়ে আনবেন এটাই প্রত্যাশা।

জনপ্রিয়